Ittipsrangpur

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারদের ছবি ব্যবসায়, না পড়লে মিস করবেন...

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ নামে আজ এক নতুন যুদ্ধের জন্ম নিয়েছে। শিক্ষার অধিকার সবার। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয় অপর্যাপ্ততার কারণে আজ ভার্সিটি অ্যাডমিশন যুদ্ধ রূপ নিয়েছে। তবে যাই হোক সে কথায় যাচ্ছিনা। আজ লিখছি এই ভর্তি যুদ্ধ সংক্রান্ত একটি সচেতনতামূলক পোস্ট।

অমুক ভার্সিটির ১ম স্থান অধিকারী তমুক স্টুডেন্টটা আমাদের! এই দেখুন প্রমাণ। জি, প্রমাণ দেখানোর জন্য তাঁরা তাদের লিফলেটে ঐ তমুক স্টুডেন্টটার ছবি, স্বীকারোক্তি এমনকি স্বাক্ষর সহ তুলে ধরে। সেটাও আমাদের সমস্যা না রে ভাই। তাহলে সমস্যাটা কি? সমস্যাটা আমাদের তখনই যখন একাধিক কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনে ঐ একই স্টুডেন্টের ঐ একই ছবি, স্বীকারোক্তি এবং স্বাক্ষর দেখা যায়। ভাই প্রতিটা প্রতিষ্ঠান, পন্য বা সেবার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গুণ থাকে। সেটাকেই পুঁজি করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। এটাই হওয়া উচিৎ বিজ্ঞাপনের নীতি। বিজ্ঞাপন কোন খারাপ কিছু নয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা কাঙ্ক্ষিত পন্য বা সেবাটি নির্বাচন করতে পারি। কিন্তু বিজ্ঞাপনের তথ্যটা তো সঠিক হতে হবে। আল্লাহ মালুম, আমাদের দেশে সেই বিজ্ঞাপনের কোন নীতি আজও আছে কিনা! টিভিতে যদি ৩টা ম্যাঙ্গো জুসের কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখেন। তবে হয়ত দেখা যাবে ৩ টা কোম্পানিই ৩ রকম গুণ বা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবে। এখন গুণগুলো কতটা সত্য সেটা তো আপনার বিচার করার ক্ষমতা নেই। প্রাথমিক ভাবে আপনি যে গুণটিকে ভালো লাগবে সেই কোম্পানিটিকেই পছন্দ করবেন ঐ বিজ্ঞাপন দেখার পরে।
কিন্তু ভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং সেন্টারগুলোর বিজ্ঞাপন চিত্র এবং প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন এমনকি ভয়ঙ্কর। বিজ্ঞাপন বলতেই তাঁরা ছবি ব্যবসায় ছাড়া আর কিছু বুঝে না। কিন্তু আমাদের আপত্তি সেখানেও নয়। আপত্তি হলো তাঁরা যে পরিমাণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তা বলার বাহিরে। একজন মেধাবী স্টুডেন্টের ছবি ব্যবহৃত হয় একাধিক কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনে। এটা কেমন বিজ্ঞাপন? এটা কেমন প্রতারণা? আবার সেই ছবি ব্যবহার নিয়েও চলে ঐসব কোচিং সেন্টারগুলোর মাঝে বাক যুদ্ধ।
প্রমাণ ছাড়া তো কোন কিছুই আজকাল বিশ্বাস হতে চায় না। যদিও আজকে আমার এই অভিযোগে পাল্টা অভিযোগ দেয়ার মতো লোক খুঁজে পাবোনা। তবুও তুলে ধরছি সচিত্র প্রমাণ। যেন কোন গলাবাজি না বের হয়। এই বিষয়টা এতোটা উদ্ঘাটন করা আমার কাজ না। তবুও লেখার স্বার্থে অন্তত একটা প্রমাণ কষ্ট করে তুলেই ধরলাম। তবে প্রমাণ দেয়ার পূর্বে এর ইতিকথা বলি। আজ পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে বেশ কিছু কোচিং এর লিফলেট পেলাম। এর মাঝে একটা লিফলেট ছিল UniAid নামের জনপ্রিয় ভার্সিটি ভর্তি কোচিং সেন্টারের। বিজ্ঞাপনের প্রথম পাতাতেই যথারীতি বেশ কিছু মেধাবীর ছবি পেলাম। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন ইউনিট থেকে প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছে। বাড়ি ফেরার সময় অটো থেকেই চোখ গেল রাস্তার পাশে ঝুলে থাকা আরেক ব্যানারে। ব্যানারটি ছিল আরেক স্বনামধন্য কোচিং সেন্টার Saifur's -এর। এই ব্যানারেও দুটো ছবি! আরেহ এই দুটো ছবি তো ৫ মিনিট আগেই UniAid কোচিং এর লিফলেটে দেখলাম। ছবি দুটোর একজন চৈতী (প্রথম স্থান, ঘ ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)  এবং অন্যজনের নাম সবুজ (দ্বিতীয় স্থান, গ ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। আমিতো পুরা আহম্মক সেজে গেলাম। হ্যাঁ, এমনই প্রতারণা করে চলেছে কোচিং গুলো। আসুন এবার চলে যাই সচিত্র প্রমাণ পত্রে।
একটু আগে বলেছি, ঢাবিতে চান্স পাওয়া এবং প্রথম স্থান অধিকারী মেধাবী চৈতি'র কথা। মনে আছে? যার একই ছবি দেশের অন্যতম দুটো স্বনামধন্য ভার্সিটি কোচিং সেন্টার uniaid এবং Saifur's তাদের স্ব স্ব বিজ্ঞাপনে চৈতিকে নিজেদের কৃতি শিক্ষার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে। এর মানে কি এটাই দাঁড়ায় না যে, ঐ শিক্ষার্থী দুটো কোচিং সেন্টারেই কোচিং করেছে? না সেটা সম্ভব না। সেটার প্রমানই তুলে ধরছি। নেটে সার্চ করলাম ঢাবিতে প্রথম স্থান অধিকারী চৈতিকে নিয়ে। প্রথমেই পেলাম uniaid এর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট। সেটি পড়ে জানতে পারলাম গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় "চৈতি তুমি কার?" শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল অন্য আরেক স্বনামধন্য কোচিং সেন্টার Saifur's । আর Saifur's এর ঐ বিজ্ঞাপনের প্রতিবাদ করেই uniaid এর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে এই ফেসবুক পোস্টটি। পোস্টটিতে চৈতির স্বীকারোক্তিমূলক এক ভিডিও বার্তা সংযুক্ত করে uniaid দাবি করেছে চৈতি শুধু তাদের কোচিং সেন্টারেই পড়ে ভালো ফল পেয়েছে এবং অন্যদিকে চৈতিকে নিজেদের ছাত্রী হিসেবে দাবি করে Saifur's যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে তাকে চোরের মায়ের বড় গলা বলে আখ্যা দিয়েছে uniaid । uniaid কোচিং সেন্টারের দেয়া ফেসবুক পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এবার এই পোস্টের সূত্র ধরে একটু নজর দেই ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় Saifur's -এর বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনটির শিরোনাম ছিল "চৈতি তুমি কার?" Saifur's এর এই বিজ্ঞাপনেও চৈতির ছবি উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে, চৈতি শুধু Saifur's কোচিং -এ পড়েছে এবং ঢাবিতে ভালো ফল করেছে। এছাড়া Saifur's ব্যতীত অন্য কোন ভার্সিটি কোচিং সেন্টার চৈতির ছবি ব্যবহার করে থাকলে তাদের "ছবি ব্যবসায়ী" বলেছে Saifur's। তাঁরাও প্রমান হিসেবে চৈতির স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করছে। Saifur's এর পক্ষ থেকে চৈতির স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও লিংক
Saifur's কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনের প্রতিবাদে Uniaid কোচিং সেন্টারের ফেসবুক স্ট্যাটাস

এখন বলুন, ঘটনা কি দাঁড়াল? কোন প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করব আমরা? একজন কৃতি শিক্ষার্থীকে দাবি করছে দুই প্রতিষ্ঠান। এবং তাঁরা সেই হিসেবে তাদের বিজ্ঞাপনে ছবিও ছাপিয়ে যাচ্ছে। ছবি নিয়ে চলছে এক রমরমা ব্যবসায় এবং প্রতারণা। আমার মূল্যবান সময় নস্ট করে একটার বেশী প্রমাণ খোঁজা সম্ভব হলোনা। কারো ইচ্ছে থাকলে নিজ ইচ্ছায় অনুসন্ধান করতে পারেন। তবে এই ঘটনাটি যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আজ অবগত তা আমার বিশ্বাস। কিন্তু বিজ্ঞাপনের নামে শিক্ষা এবং মেধাবী কৃতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যবসায় চলছে তা কি অপরাধের পর্যায়ে পড়েনা? নাকি এটাকে প্রতারনাও বলা চলেনা? প্রশাসন নিরব কেন? ভার্সিটি ভর্তির মতো কঠিন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করবেন না প্লিজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যদি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করে। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমরা আর কি আশা করতে পারি? তাই, সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের সব ভার্সিটি কোচিং সেন্টারের আজ প্রায় একই অবস্থা। এদের বিজ্ঞাপন মানেই শুধু প্রতারনা...!!
 
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারদের ছবি ব্যবসায়, না পড়লে মিস করবেন... বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারদের ছবি ব্যবসায়, না পড়লে মিস করবেন... Reviewed by Unknown on 12:54:00 AM Rating: 5

No comments: